মক্কার হাতিমে কাবা থেকে রাসূলুল্লাহ সা. ‘বোরাক’ যোগে মসজিদুল আকসায় পৌঁছলেন। সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বোরাক সেখানেই বেঁধেছিলেন, যেখানে আম্বিয়ায়ে কেরাম তাঁদের সাওয়ারী বাঁধতেন। এখানে উল্লেখ্য যে, মসজিদুল আকসার সামনে মুসল্লীদের জন্য নিজ নিজ সাওয়ারী বেঁধে রাখার ব্যবস্থা ছিল। এতে করে মসজিদের চত্বরে মুসল্লীদের গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা রাখা জরুরী প্রমাণিত হয় এবং নিজ নিজ বাহন হেফাযতের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা তাকওয়ার পরিপন্থী তো নয়ই, বরং আবশ্যক প্রমাণিত হয়। কেননা, রাসূল সা. স্বীয় বোরাক পাথরের সাথে বেঁধে রেখেছিলেন। অতপর হুজুস সা. মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করে দু’রাকাত নামায (তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা মসজিদের সম্মানার্থে নামায) আদায় করেন। এতে করে নামায নিষিদ্ধের সময় এবং যে সমস্ত সময় নফল নামায পড়া মাকরূহ, ঐ সকল সময় ছাড়া অন্য যে কোন সময় মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাকাত নামায পড়া সুন্নাত প্রমাণিত হয়। সূর্য উদয় হওয়ার সময়, সূর্য ঠিক যখন মাথা বরাবর তথা মধ্যদিবস এবং সূর্যাস্তের সময়- এই তিন সময় যে কোন নামায পড়া হারাম। আর সুবহে সাদেক থেকে নিয়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত তথা ফজরের নামাযের পুরো সময়টাতে নফল নামায পড়া মাকরূহ এবং আসরের নামাযের পুরো সময়টাতেও নফল নামায পড়া মাকরূহ।
এদিকে মসজিদুল আকসায় রাসূল সা.-এর শুভাগমণ উপলক্ষে সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম তাঁর জন্য অপেক্ষমান ছিলেন। এঁদের মধ্যে হযরত ইবরাহীম আ., হযরত মুসা আ. ও ঈসা আ. প্রমুখ নবীগণ ছিলেন অন্যতম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরো অনেক ফেরেশতা এসে মসজিদুল আকসায় সমবেত হলেন। তখন একজন মুয়াযযিন যথারীতি আযান এবং ইকামত দিলেন। সবাই অপেক্ষমান ছিলেন, এ জামাতে কে ইমামতি করবেন। হযরত জিবরাইল আ. হুজুর সা.-এর হাত ধরে সামনে বাড়িয়ে দিলেন। তিনি সকল নবী ও রাসূলের ইমামতি করলেন এবং বিশিষ্ট রাসূলগণের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হলেন। তাঁরা সকলেই মহান আল্লাহর হামদ পেশ করলেন। রাসূল সা. যখন মহান আল্লাহর হামদ বর্ণনা শেষ করলেন, তখন হযরত ইবরাহীম আ. সকল আম্বিয়ায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে ঘোষণা করলেন, ‘আপনাদের মধ্যে মর্যাদা ও কামালিয়াতের (পূর্ণাঙ্গতা) দিক থেকে মুহাম্মাদ সা. সর্বশ্রেষ্ঠ। এরপর হুজুর সা.-এর সামনে তিনটি পেয়ালা পেশ করা হল। প্রথমটি পানির, দ্বিতীয়টি দুধের এবং তৃতীয়টি শরাবের। তিনি দুধের পেয়ালাটি তুলে নিলেন। কোন কোন হাদীসে উল্লেখ আছে যে, তাঁর সামনে একটি মধুর পেয়ালাও পেশ করা হয়েছিল। জিবরাইল আ. বললেন, হে রাসূল! আপনি দ্বীন-ই ফিতরাত তথা স্বভাব সম্মত প্রকৃতিগত ধর্মই গ্রহণ করলেন।
উল্লেখিত ঘটনা থেকে বোঝা গেল, কোন মেহমানের আগমণের সৌজন্যে আগে থেকেই তাঁর অভ্যর্থনায় সমবেত হওয়া বা এগিয়ে আসা বাঞ্চনীয় এবং উপস্থিতদের মধ্য থেকে কেউ না কেউ মেহমানের সঙ্গে অন্যান্যদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়াও আবশ্যক। সেই সাথে মেহমানের জন্য হালকা নাশতার ব্যবস্থা করাও জরুরী এবং মেহমানের জন্য তাঁর রুচিসম্মত খাবার গ্রহণের স্বাধীনতা থাকবে।
মসজিদুল আকসায় সমস্ত নবী ও রাসূলের জামাতে ইমামতি করার পর হুজুর সা.কে নিয়ে হযরত জিবরাইল আ. আরো অন্যান্য ফেরেশতাসহ উর্ধ্বলোকে রওয়ানা দিলেন। অন্য বর্ণনায় জানা যায়, মসজিদুল আকসা থেকে বের হওয়ার পর জান্নাত থেকে ‘যমরুদ’ অথবা ‘যবরযদ’ নামক মূল্যবান জান্নাতী পাথরের একটি সিঁড়ির মাধ্যমে তিনি আসমানে আরোহণ করলেন। ফেরেশতারা তাঁর দু’পাশে পার্শ্বচর হিসেবে ছিলেন। এদিকে ‘বোরাক’ মসজিদুল আকসার সামনে যথাযথভাবে বাঁধা ছিল। রাসূলুল্লাহ সা. আসমান ভ্রমণ শেষে বাইতুল মুকাদ্দাসে ফিরে এসে সেই বোরাকে সাওয়ার হয়ে পুণরায় মক্কা মুকাররমায় প্রত্যাবর্তন করলেন। কোন কোন ঐতিহাসিক এটাও সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেছেন যে, বোরাকের উপর সাওয়ার হয়ে ঐ সিঁড়ির মাধ্যমেই তিনি আসমানে পৌঁছেন। এটা রাসূল সা.-এর অধিক সম্মান ও শুভাগমনের গুরুত্ব প্রকাশ করে। এই ঘটনায় এটাও প্রকাশ পায় যে, মেহমানের জন্য সাওয়ারীর ব্যবস্থা মেজবানেরই দায়িত্বে এবং মেজবান চাইলে সাওয়ারী পরিবর্তনও করতে পারেন।
সহীহ হাদীসসমূহে বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. যখন প্রথম আসমানের কাছে পৌঁছলেন, তখন জিবরাইল আ. আসামানের দরোজা খুলতে বললেন। পাহাড়াদার ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সাথে কে? জিবরাইল আ. বললেন, ‘মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সা.’। পাহাড়াদার ফেরেশতা জিজ্ঞেস করেলন, আল্লাহর সাথে দীদারের জন্য তাঁকে দাওয়াত জানানো হয়েছে? জিবরাইল আ. বললেন, হ্যাঁ। ফেরেশতারা শুনে সমস্বরে মারহাবা বলে উঠলেন এবং দরোজা খুলে দিলেন। আসমানে প্রবেশ করে তিনি একজন সম্মানিত বৃদ্ধ লোককে দেখলেন। জিবরাইল আ. তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ইনি আপনার আদি পিতা আদম আ.। রাসূলুল্লাহ সা. তাঁকে সালাম করলেন। হযরত আদম আ. সালামের জবাব দিয়ে বললেন, মারহাবা, সুসন্তান ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীকে। তিনি তাঁর জন্য দুআ করলেন। রাসূল সা. দেখলেন, আদম আ.-এর ডান পাশে কিছু চিত্র, যখন তিনি তা দেখেন, তখন তিনি খুশি হয়ে হাসেন। আর বাম পাশে কিছু চিত্র, যখন তিনি তা দেখেন, তখন ব্যথিত হয়ে কাঁদেন। জিবরাইল আ. জানালেন, ডান পাশে তাঁর নেককার সন্তানদের চিত্র, কিয়ামতের দিন তারা আসহাবুল ইয়ামিন ও জান্নাতবাসী হবেন। আর বাম পাশে রয়েছে তাঁর পাপী সন্তানদের চিত্র। কিয়ামতের দিন এরা হবে আসহাবুশ শিমাল ও জাহান্নামবাসী।অন্য এক বর্ণনায় আছে, হযরত আদম আ.-এর ডান পাশে একটি দরোজা আছে, সেদিক দিয়ে অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত বাতাস আসে। বাম পাশেও একটি দরোজা আছে, সেদিক দিয়ে অত্যন্ত দূর্গন্ধময় বাতাস বইতে থাকে। যখন ডান দিকে দেখেন, তখন আনন্দিত হন এবং যখন বাম দিকে দেখেন, তখন বিষন্ন হন।
এরপর রাসূল সা. দ্বিতীয় আসমানে তাশরীফ নিলেন। সেখানে হযরত ইয়াহইয়া আ. ও ঈসা আ.কে দেখলেন। জিবরাইল আ. তাঁদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। নবী সা. তাঁদেরকে সালাম করলেন। তাঁরা সালামের জবাব দিয়ে বললেন, ‘মারহাবা, সৌভাগ্যবান ভাই ও শ্রেষ্ট নবী।অনুরূপভাবে তিনি তৃতীয় আসমানে পৌঁছে হযরত ইউসুফ আ.-এর সাথে সাক্ষাত করলেন। পূর্বের মতই সালাম বিনিময় ও কথাবার্তা হল। চতুর্থ আসমানে তাশরীফ নেয়ার পর সেখানে হযরত ইদরীস আ.-এর সঙ্গে সাক্ষাত হল। পূর্বের মতই ছালাম বিনিময় ও কথাবার্তা হল। তারপর পঞ্চম আসমানে হযরত হারূন আ.-এর সঙ্গে, ষষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা আ.-এর সঙ্গে এবং সবশেষে সপ্তম আসমানে হযরত ইবরাহীম আ.-এর সঙ্গে সাক্ষাত হল। তিনি তাঁকে বাইতুল মামুরের সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে থাকতে দেখলেন।
উল্লেখ্য যে, বাইতুল মামুর ফেরেশতাদের কেবলা। কাবা শরীফের ঠিক সোজা উপরে সপ্তম আসমানে এটি অবস্থিত। প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা এটা তাওয়াফ করেন। যাঁরা একবার তাওয়াফ করেন, তাঁরা আর ভবিষ্যতে তাওয়াফ করার সুযোগ পান না।
জিবরাইল আ. ইবরাহীম আ.-এর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ইনি আপনার বংশের গোড়াপত্তনকারী পিতা। তাঁকে সালাম করুন। তিনি সালাম করলেন। ইবরাহীম আ. সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ‘মারহাবা, নেককার সন্তান ও শ্রেষ্ঠ নবীকে।’
উল্লেখিত ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, যিনি আগন্তুক, তিনিই প্রথমে সালাম দিবেন। সেই সাথে উপস্থিত লোকদের উচিত, আগন্তুককে যথাযথ সম্মান প্রদর্শ ও মূল্যায়ন করা।
এরপর রাসূল সা.কে সিদরাতুল মুনতাহায় নেয়া হল। সপ্তম আসমানে একটি বরই গাছ আছে। পৃথিবী থেকে যা কিছু উর্ধ্বে ওঠে, তা সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে সমাপ্ত হয়ে যায় এবং পরে সেখান থেকে উপরে উঠানো হয় আর উর্ধ্বলোক থেকে যে বার্তা আসে, তাও সিদরাতুল মুনতাহায় এসে থেকে যায়। পরে তা নীচে আসে। এখানে এসে রাসূল সা. জিবরাইল আ.কে আসল ছুরতে তথা পূর্ণ অবয়বে দেখতে পেলেন এবং মহান আল্লাহর অসংখ্য অতুলনীয় নিদর্শন, মনিমুক্তার চাকচিক্য, ফেরেশতাদের পালক ইত্যাদি দেখলেন, যা সিদরাতুল মুনতাহা তথা পরিসমাপ্তির বরই গাছকে ঘিরে রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন- ‘তিনি (মুহাম্মাদ সা.) তাঁকে (জিবরাইল আ.কে) আরেকবার (মিরাজে পূর্ণ অবয়বে) সিদরাতুল মুনতাহার নিকট দেখেছিলেন, যার নিকট জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত। যখন বৃক্ষটি যা দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ার, তা দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল। তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। তিনি তো তাঁর প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিলেন। {সূরা ৫৩ নাজম, আয়াত-১৩-১৮}
তিনি বাইতুল মামুরে নামায আদায় করে সিদরাতুল মুনতাহার দিকে উঠতে লাগলেন। সিদরাতুল মুনতাহা অতিক্রম করার পর জান্নাতের দিকে এগিয়ে গেলেন। জান্নাত ভ্রমণের পর তাঁকে জাহান্নাম দেখান হল। হুজুর সা. সিদরাতুল মুনতাহায় আশ্চর্যজনক নূরের তাজাল্লী ও বিস্ময়কর কুদরত অবলোকন করলেন। এরপর রাসূল সা. আরো অগ্রসর হয়ে এমন এক স্থানে পৌঁছলেন, যেখানে ‘সরীফুল আকলাম’ শোনা যাচ্ছিল। লেখার সময় কলমের যে আওয়াজ হয়, তাকে ‘সরীফুল আকলাম’ বলা হয়। সেখানে সৃষ্টির ভাগ্য ও নিয়তি লেখা হয়। ফেরেশতাগণ আল্লাহর যাবতীয় হুকুম-আহকাম লেখেন এবং লাওহে মাহফুফ থেকে তা সংগ্রহ করেন।
রাসূল সা. সরীফুল আকলাম অতিক্রম করে বহু পর্দা ভেদ করে আল্লাহ রাববুল আলামিনের সান্নিধ্যে পৌঁছেন। বর্ণিত আছে, তাঁর সাওয়ারী হিসেবে তখন ‘রফরফ’ নামক একটি বাহন (সবুজ আসন) পেশ করা হয়েছিল। তিনি তাতে সাওয়ার হয়ে আরশে আজীমে মহান আল্লাহর অত্যন্ত সন্নিকটে উপস্থিত হন। ফাতহুল বারী গ্রন্থের মিরাজ অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে, হুজুর সা. অসংখ্য নূরের পর্দা ভেদ করে আসমান ও যমীনের নূরের অতুলনীয় সৌন্দর্যকে অবলোকন করলেন এবং মহান আল্লাহর সাথে সরাসরি কথাবার্তা ও ওহী লাভের অনন্য সম্মানে ভূষিত হলেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবীবের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ করেছেন ও অসংখ্য সুসংবাদ এবং বিশেষ বিশেষ আহকাম দান করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হুকুম ছিল এই যে, তাঁকে ও তাঁর উম্মতকে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের আদেশ দিয়েছিলেন। রাসূল সা. এসব তোহফা নিয়ে সানন্দচিত্তে ফিরে আসলেন। পথিমধ্যে হযরত মূসা আ.-এর সাথে দেখা হল। তিনি সবিস্তারে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন যে, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের হুকুম করা হয়েছে। মূসা আ. বললেন, বনি ইসরাইলের তুলনায় আপনার উম্মত দূর্বল ও ক্ষীণ। তারা এসব ফরয ইবাদত আঞ্জাম দিতে পারবে না, বিধায় আপনি পুণরায় আল্লাহর দরাবারে গিয়ে উম্মতের দায়িত্ব লাঘর করার আবেদন করুন। রাসূল সা. আবেদন করলে আল্লাহ তাআলা করুণাবশত পাঁচ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে দিলেন। মূসা আ.-এর সাথে পুনরায় দেখা হলে তিনি পূর্বের কথাই বললেন। রাসূল সা. আবার গেলেন এবং আরো কমিয়ে দেয়ার আবেদন জানালেন। এভাবে কয়েকবার কমানোর পর যখন পাঁচ ওয়াক্তে উপনিত হল, তখনও মূসা আ. পরামর্শ দিলেন ‘আবার যান এবং আল্লাহর কাছে আবেদন করুন’। রাসূল সা. বললেন, বারবার যাওয়াতে আমি লজ্জাবোধ করছি। হঠাৎ গায়েব থেকে এক আওয়াজ এলো- ‘এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সাওয়াব পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের সমানই হবে। আমার ওয়াদার পরিবর্তন নেই’।
এভাবে রাসূল সা. আসমান থেকে ফিরে আসেন এবং প্রথমে বাইতুল মুকাদ্দাসে অবতরণ করেন। এরপর সেখান থেকে বোরাকে সাওয়ার হয়ে সুবহে সাদেকের পূর্বেই মক্কায় পৌঁছেন।সকালে তিনি এ ঘটনা কুরাইশদের সামনে বর্ণনা করলেন। সাহাবায়ে কেরাম নিদ্বিধায় ও নিঃসংকোচে বিশ্বাস করে নিলেন। কিন্তু দূরাচার কাফেররা উপহাসচ্ছলে হাত তালি দিতে লাগল। তারা হুজুর সা.কে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বাইতুল মুকাদ্দাসের অবস্থান, নির্মাণ শৈলী ইত্যাদি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল। এদিকে আল্লাহ তাআলা বাইতুল মুকাদ্দাসকে মুহূর্তের মধ্যেই তাঁর চোখের সামনে এনে দিলেন। অন্যদিকে কাফেররা একের পর এক প্রশ্ন করতেই লাগল। রাসূল সা. দেখে দেখে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলেন। অবশেষে জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে পথের কোন প্রামাণ্য ঘটনা বলুন। রাসূল সা. উত্তরে বললেন, অমুক জায়গায় একটি ব্যবসায়ী কাফেলার সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছিল, যারা শাম থেকে মক্কা ফিরছিল। তাদের একটি উট হারিয়ে গিয়েছিল, পরে তা পাওয়া গিয়েছিল।
ইনশাআল্লাহ তিন দিন পর উক্ত কাফেলা মক্কা পৌঁছবে এবং একটি ছাই রঙের উট সবার আগে থাকবে, যার পিঠের উপর মালপত্র বোঝাই করা চটের বস্তা থাকবে। অতএব, তৃতীয় দিন দেখা গেল, বর্ণিত অবস্থায় সেই কাফেলা মক্কায় প্রবেশ করল এবং তারা তাদের উট হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করল। এতে ঈমানদারদের ঈমান আরো বেড়ে গেল আর কাফেররা এটাকে যাদু বলে অবিশ্বাস করল। তারা একগুয়েমি ও মিথ্যা অপবাদে লিপ্ত রইল এবং আক্রমণাত্মক উক্তি করতে লাগল। কিছু লোক হযরত আবু বকর রাযি.-এর কাছে গিয়ে বলল, তোমার বন্ধু মুহাম্মাদ বলেছে, সে নাকি গত রাতে বাইতুল মুকাদ্দাস গিয়েছিল এবং সুবহে সাদেকের পূর্বেই ফিরে এসেছে, তুমি কি এটা বিশ্বাস করবে? আবু বকর রাযি. বললেন, যদি এ কথা রাসূল সা. বলে থাকেন, তবে তিনি বিলকুল সত্য কথা বলেছেন। আমি এটা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি। কেননা, আমি তাঁর ঘোষিত আসমানী সংবাদাদি সকাল-সন্ধ্যায় অদৃশ্যভাবে বিশ্বাস করছি, যা এর চাইতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐদিন থেকে তাঁকে ‘সিদ্দীক’ উপাধিতে ভূষিত করা হল। {উল্লেখিত সকল বর্ণনা উপমহাদেশের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আল্লামা ইদরিস কান্দলবী রহ. রচিত ‘সীরাতে মুস্তফা’ (উর্দু) থেকে সংকলিত}
লেখক,মাওলানা কাজী ফজলুল করিম।
মুহাদ্দিস ও খতীব, কারবালা মাদরাসা, বগুড়া।