পৃথিবীতে একমাত্র ‘ইসলাম’ই হল আল্লাহ প্রদত্ত ভারসাম্যপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। তাওহীদ এ জীবন ব্যবস্থার বুনিয়াদ। সুতরাং ‘ইসলাম’ নামক ইমারত কোথাও নির্মাণ করতে হলে সর্বপ্রথম এর মূল বুনিয়াদ তথা তাওহীদ বা একত্ববাদকে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করতে হবে। বুনিয়াদ দূর্বল থেকে গেলে তার উপর কোন সুদৃঢ় ইমারত নির্মিত হতে পারে না। নিরেট ইমারতের ন্যায় আদর্শিক ইমারতের বেলায়েও কথাটি সমভাবে প্রযোজ্য। একজন মানুষকে খাঁটি মুসলমান হতে হলে কি কি বিষয়ে কোন ধরনের বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে হবে তা কুরআনুল কারীম ও হাদীস শরীফের বিভিন্ন স্থানে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন- ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রাসূল ও তাঁর কিতাবের উপর, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রাসূলের উপর এবং (বিশ্বাস স্থাপন কর) ঐ সমস্ত কিতাবের উপর, যেগুলো নাযিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রাসূলগণের উপর ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।’ {সূরা ৪ নিসা, আয়াত-১৩৬}
উল্লেখিত আয়াতে পাঁচটি বিষয়ের উপর পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এক. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। দুই. তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস। তিন. তাঁর কিতাবের তথা আল-কুরআনের প্রতি বিশ্বাস। চার. তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস। পাঁচ. কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস। এছাড়া অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- ‘বল, সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে’ {সূরা ৪ নিসা, আয়াত-৭৮} এই আয়াত থেকে আরো একটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস আনয়নের কথা প্রমাণিত হয়, তা হল, ছয়. ভাল-মন্দ ভাগ্য সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। অনুরূপভাবে সাত. পুণরুত্থান তথা মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস স্থপনের কথা প্রমানিত হয় কালামে পাকের সূরায়ে বাকারার ২৮নং আয়াতের মাধ্যমে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছো? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অত:পর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করবেন। অতপর তাঁরই প্রতি তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে।’ উল্লেখিত আয়াত সমূহ থেকে সর্বমোট সাতটি বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস আনয়নের কথা প্রমাণিত হয়, যেগুলোকে একত্রে ‘ঈমানে মুফাসসাল’ নামে অভিহিত করা হয়। এই ঈমানে মুফাসসালের প্রথমটির নাম হল আল্লাহর তাওহীদের প্রতি বিশ্বাস।
‘তাওহীদ’ শব্দটি আরবী ‘ওয়াহাদা’ ক্রিয়ামূল থেকে গৃহীত, যার অর্থ ‘এক হওয়া’, ‘একক হওয়া’ বা ‘অতুলনীয় হওয়া’। শুধু ‘আল্লাহ’কে স্বীকার করলেই ঈমানদার হওয়া যায় না। মক্কার কাফেররাও কিন্তু আল্লাহকে স্বীকার করতো! তারপরেও কিন্তু ঈমানদার হতে পারেনি। কারন আল্লাহকে রাসূল সা. যেভাবে স্বীকার করতে বলতেন বা যেভাবে তিনি আল্লাহ সম্পর্কে, তাঁর গুণাবলি সম্পর্কে, তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরতেন, মক্কার কাফেররা সেভাবে মানতে রাজী ছিল না। ঐ কারণেই মক্কার কাফেররা আল্লাহকে স্বীকার করার পরেও ঈমানদার হতে পারেনি। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আসমান ও যমীন কে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছো কি, যদি আল্লাহ আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাক, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে।’ {সূরা ৩৯ যুমার, আয়াত-৩৮}
উল্লেখিত আয়াত থেকে বুঝা গেল যে, মক্কার কাফেররা মহান আল্লাহকে একক ক্ষমতার মালিক, প্রতিপালনের ক্ষেত্রে একচ্ছত্র মালিক, গুণ ও জ্ঞানগত একক মালিক হিসাবে বিশ্বাস করতো না। অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে কাফেররা তাদের কল্পিত বিভিন্ন দেব-দেবীর ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্বের অংশীদার সাব্যস্ত করতো।
সকল ক্ষমতার উৎস মহান আল্লাহ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাকের ঘোষণা- ‘আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মাঝে সবকিছুর মালিকানা আল্লাহর। নিশ্চয় তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।’ {সূরা ৫ মায়েদা, আয়াত-১২০}। মক্কার কাফেরদের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা.-এর বর্ণিত তাওহীদ ও আল্লাহ সম্পর্কে ধারনার ব্যাপারে প্রথম সংর্ঘষ এখানে। কাফেররা আল্লাহকে মানে, কিন্তু আল্লাহর সকল ক্ষমতার উৎস বা মূল বা একক ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে বিশ্বাস করে না। আজকের পাশ্চাত্য ধাঁচের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হয়ে যারা জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস বলে মনে করে বা প্রচার করে বা কাগজ-কলমে লিখে থাকে, এদের সাথে মক্কার ঐ কাফেরদের কোন পার্থক্য আছে কি? এদেরকে মুসলমান বলা যায় কি? এর জবাব পাঠকের কাছে ছেড়ে দিলাম। মহান আল্লাহর ঘোষণা, ‘আপনি (মুহাম্মদ সা.) বলে দিন, আমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্ত্তকে আহবান করবো, যে আমাদের উপকার করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না এবং আমরা কি পশ্চাদ পদে ফিরে যাবো, এরপর যে, আল্লাহ আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন? {সূরা ৬ আনআম, আয়াত-৭১}
মক্কার কাফেররা তো মাত্র ৩৬০টি মূর্তিকে আল্লাহর ক্ষমতার অংশীদার মনে করতো। আর আজকের পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের পূজারীরা সকল ক্ষমতার ব্যাপারে কোটি কোটি জনগণকে শরীক সাব্যস্ত করছে। এরা কি ঐ মক্কার কাফেরদের চাইতেও জঘন্য অপরাধী নয়?
অনুরূপভাবে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিকানা একমাত্র আল্লাহর, মহান আল্লাহর ঘোষণা, ‘বলুন সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর , যিনি না কোন সন্তান রাখেন, না তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন শরীক আছে এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্থ হন না, যে কারণে তাঁর কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং আপনি তাঁর মাহাত্ম বর্ণনা করতে থাকুন।’ {সূরা ১৭ বনী ইসরাঈল, আংয়াত-১১১}
আল্লাহ পাকের এই সার্বভৌমত্বের মালিকানার ব্যাপারেও মক্কার কাফেরদের ছিল চরম আপত্তি। তারা চন্দ্র ও সূর্যকে সার্বভৌম ক্ষমতার অংশীদার মনে করতো। ঠিক আজকের পাশ্চাত্যের গণতন্দ্রের পূজারী ও নাস্তিক্যবাদের ধর্ম নিরপক্ষেতাবাদের পূজারীরা সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসেবে আল্লাহকে স্বীকার করতে চাচ্ছে না। তারা একথা মুখেও বলছে এবং কাগজ-কলমেও লিখছে। সুপ্রিয় পাঠক! এরা কি মুসলমান থাকতে পারে? এর ফয়সালা আপনারাই করুন।
সকল কাজে-কর্মে, চিন্তা-চেতনায় আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা হল একজন ঈমানদারের ঈমানের মূল অংশ। মহান আল্লাহর ঘোষণা- ‘আল্লাহর উপর ভরসা না করার কি কারন থাকতে পারে, অথচ তিনি আমাদেরকে আমাদের পথ বলে দিয়েছেন। তোমরা আমাদেরকে যে পীড়ন করেছো, সে জন্য আমরা সবর করবো। ভরসা কারীদের আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিৎ। {সূরা ১৪ ইবরাহীম, আয়াত-১২}
সকল ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের মালিক যে একমাত্র আল্লাহ, এ বিষয়ে অনেক মুসলমানই আজকাল সচেতন নন। অনেক সময় বক্তৃতা-বিবৃতি বা লেখনীর মাধ্যমে সকল ক্ষমতা, সার্বভৌমত্বের মালিকানা ও মহান আল্লাহর প্রতি আস্থা ও ভরসার বিষয়ে তাঁরা চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে নিজের অজান্তেই নিজেকে কুফুরীতে অর্ন্তভুক্ত করে নিচ্ছেন। তাই, একজন মুসলমান হিসেবে আল্লাহর তাওহীদ বা একত্ববাদ সম্পর্কে সুস্পষ্ঠ ধারনা থাকা প্রয়োজন। তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।
প্রথমত তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত বা নাম ও গুনাবলীর তাওহীদ। অর্থাৎ দৃঢ়ভাবে একথার বিশ্বাস স্থাপন করা যে, মহান আল্লাহ সকল পূর্ণতার গুণে গুণান্বিত। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে এবং রাসূলুল্লাহ সা. বিভিন্ন হাদীসে আল্লাহর বিভিন্ন নাম ও বিশেষণের উল্লেখ করেছেন। এ সকল নাম ও বিশেষণের উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে, আল্লাহর কোন কর্ম, গুণ বা বিশেষণ কোনো সৃষ্টজীবের কর্ম, গুণ বা বিশেষণের মত নয়, তুলনীয় নয় বা সামঞ্জস্য পূর্ণ নয়। এ পর্যায়ের তাওহীদে কাফেরদের কিছু আপত্তি ছিল। তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করলেও তাকে ‘রহমান’ বা করুনাময় বলে বিশ্বাস করতে বা এ নামে ডাকতে অস্বীকার করতো। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন- ‘যখন তাদেরকে বলা হয় ‘সিজদাবনত হও রহমান-এর প্রতি, তখন তারা বলে, রহমান আবার কে? এতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।’ {সূরা ২৫ ফুরকান, আয়াত-৬০}
এ বিভ্রান্তি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল, এ বিষয়ে কুরআনের উপর পরিপূর্ণ নির্ভর করা। কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর বিষয়ে যে সকল বিশেষণ বা কর্মের গুণ আরোপ করা হয়েছে সেগুলোকে কোনরূপ বিকৃতি, ব্যাখ্যা, তুলনা বা পরিবর্তন ছাড়াই বিশ্বাস করা। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যে, যদি কেউ ‘বিসমিল্লাহ’-এর অনুবাদ ‘সৃষ্টিকর্তার নামে আরম্ভ’ এই বাক্য দিয়ে করে তাহলে সে তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত বা নাম ও গুনাবলীর তাওহীদে বিকৃতি করলো। এতে করে সে এই পর্যায়ের তাওহীদকে ক্ষতিগ্রস্থ করলো। কেননা, অন্যান্য ধর্মের সৃষ্টিকর্তা আর ইসলাম ধর্মের সৃষ্টিকর্তা এক নয়। তাই যারা ‘বিসমিল্লাহ’ এর অনুবাদ ‘সৃষ্টিকর্তা’ শব্দ দিয়ে করতে চায়, তাড়া তাদের ঈমানকে জেনে-বুঝে অথবা না জেনে বুঝেই ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
তাওহীদের দ্বিতীয় প্রকার হল, তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ বা প্রতিপালনের একত্ব। অর্থাৎ এ বিশ্বের সকল কিছুর সৃষ্টি, প্রতিপালন, সংহার ইত্যাদির বিষয়ে আল্লাহর একত্ব। তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ বা প্রতিপালনের একত্বে বিশ্বাস করার অর্থ একথা বিশ্বস করা যে, মহান আল্লাহই এ মহাবিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা, প্রতিপালক, পরিচালক, সংহারক, রিযিকদাতা, পালনকর্তা, নিয়ন্ত্রক ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশনা (পরিচালনা) একমাত্র তাঁরই। আল্লাহ বরকতময়, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।’ {সূরা ৭ আরাফ, আয়াত-৫৪}
এ পর্যায়ের তাওহীদেও কাফেরদের আপত্তি ছিল। তারা মনে করতো, এ বিশ্ব জগতের প্রতিপালনে আল্লাহ কখনও কখনও ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তখন আল্লাহকে তাঁর কন্যারা অর্থাৎ ফেরেশতাগণ (নাউযুবিল্লাহ) সাহায্য করে থাকে। এ পর্যায়ের তাওহীদে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে খৃষ্টানরা। তারা ঈসা আ.কে আল্লাহর পুত্র বলে সাব্যস্ত করে কাফের হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। অনুরূপভাবে ইহুদীরাও হযরত উযায়ের আ.কে আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করে কুফুরীতে পতিত হয়েছে। ঠিক এই পর্যায়ের তাওহীদের ব্যাপারে অনেক সাধারণ মুসলমান ভাইয়েরাও নিজের জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে চাকুরী, ব্যবসা, কৃষিকাজ বা অন্য কোন পেশাকে প্রতিপালকের পর্যায়ে গণ্য করে বসে আছে, যা খুব সুক্ষ্মভাবে এই তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ-এর পরিপন্থী। চাকুরী, ব্যবসা, কৃষিকাজ বা অন্য কোন পেশা এগুলো আল্লাহ কর্তৃক প্রতিপালনের মাধ্যম মাত্র। এই মাধ্যম সমূহ ছাড়াও মহান আল্লাহ প্রতিপালন করতে সক্ষম। এগুলো মৌলিক নয়, বরং এগুলো হল ওছিলা মাত্র।
তাওহীদের তৃতীয় পর্যায় হল, তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বা ইবাদত বিষয়ক একত্ববাদ। ইবাদতের আভিধানিক অর্থ হল, চূড়ান্ত বিনয়-ভক্তি, অসহায়ত্ব ও মুখাপেক্ষিতা। আর পারিভাষিক অর্থে ইবাদত বলে, আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত ও রাসূলুল্লাহ সা. কর্তৃক প্রদর্শিত পন্থায় চূড়ান্ত বিনয়-ভক্তি, অসহায়ত্ব ও মুখাপেক্ষিতার প্রকাশ করা। অর্থাৎ শরীয়ত যে সকল কর্ম-কান্ড, আচরণ, ভক্তি-বিনয় ইত্যাদিকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করেছে এমন বিষয়াবলি ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত। যেমন, সিজদা করা, নামাযে দাঁড়ানোর ন্যায় কারো সামনে হাত বেঁধে নড়াচড়া না করে দাঁড়িয়ে থাকা, ঝুকে কুর্নিশ করা ইত্যাদি। এ পর্যায়ের তাওহীদের সাথে কাফেরদের ছিল মৌলিক আপত্তি। তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করলেও ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর ন্যায় অন্যান্য দেব-দেবীর ইবাদতও জরুরী মনে করতো। ঠিক এই পর্যায়ের তাওহীদের ব্যাপারে অনেক মুসলমানই আজ চরমভাবে উদাসীন। শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করা, শিখা চিরন্তন বা শিখা অনির্বাণে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে সম্মান প্রদর্শন করা, এসব কিছুই তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ বা ইবাদত বিষয়ক একত্ববাদের পরিপন্থী কুফুরী কাজ। হায় আফসোস! মুসলমানরা নিজেকে ঈমানদার দাবী করে, তাওহীদপন্থী দাবী করে, অথচ তাওহীদের বিভিন্ন প্রকারের মাঝে খুব সূক্ষ্মভাবে শিরকে লিপ্ত হয়ে আছে। অথচ, তারা মনে করছে আমরা ঈমানদার, যেমনটি মনে করতো মক্কার কাফেররা। আসুন! আমরা মহান আল্লাহর একত্ববাদে গভীর মনোযোগী হয়ে দৃঢ় বিশ্বাসে বিশ্বাসী হই। কতই না সুন্দর সূরা ইখলাসে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- ‘বলুন, তিনি আল্লাহ এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।’ {সূরা ১১২ ইখলাস, আয়াত ১-৪}
লেখক,মাওলানা কাজী ফজলুল করিম।
মুহাদ্দিস ও খতীব, কারবালা মাদরাসা, বগুড়া।